করোনা আতঙ্কে অতিরিক্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: এসডো
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ঃ নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (এসইউপি) পণ্য ব্যবহারের এই আকস্মিক বৃদ্ধি, বিভিন্ন উপায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে জনসাধারণের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে জনস্বাস্থ্যের জন্য আরো বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) সংগঠনের মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)। ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে এ প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায় তারা।
বিশ্বব্যাপী নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে এবার তারা পোস্টার, তথ্য বিবরণী ও কোভিড-১৯ মহামারী সম্পর্কিত জনসচেতনতামূলক ইনফোগ্রাফিক প্রকাশের মাধ্যমে ভিন্নভাবে দিবসটি পালন করেছে বলেও জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সব ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রীই অপচনশীল দ্রব্য যা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। একটি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগ পরিবেশে মিশে যেতে অন্তত ১৫ বছর সময় নেয়, এবং এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে তা সমুদ্রের পানিতে মিশে এবং সব ধাপেই পরিবেশ দূষণ অব্যাহত রাখে। একটি প্লাস্টিকের একবার ব্যবহারযোগ্য বোতল পরিবেশে মিশে যেতে সাড়ে চারশ’ বছর লাগে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিন্সট্রেশান। এইসব পরিবেশ দূষণ সবটাই বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে ততোধিক পরিচিত, তাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ বলেও মনে করেন তারা কোভিড-১৯ মহামারীর মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের দাবি নতুন ভাবে উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, করোনার কিছুটা ইতিবাচক দিক হিসেবে প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নতুন করে আমাদের সামনে উঠে এসেছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সময়ের মধ্যেই পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটতে পারে এমন আতঙ্কের মুখে আবারও বেড়েছে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার। প্লাস্টিক নিষিদ্ধের দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আগে বিশ্বের অনেক দেশেই পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো, যাদের মধ্যে বাংলাদেশ ছিলো প্রথম।
তবে অত্যন্ত ছোঁয়াচে কোভিড-১৯ রোগটি বিশ্বব্যপী ছড়িয়ে পড়ায় দেশে-বিদেশে জনসাধারণ অন্যের ছোঁয়া বস্তু বা ব্যাগ থেকে সংক্রণের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে। এমনকি এ আতঙ্কের ফলে বিশ্বের কিছু জায়গায় পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগসমূহ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে! গত ৩১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অঙ্গরাজ্য হিসেবে নিউ হ্যাম্পশায়ার মহামারীকালীন পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সম্প্রতি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে নভেল করোনা ভাইরাস, যার আরেক নাম সার্স-কভ-২, তা কোনো উপাদান নির্মিত তলের উপর কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে সে সম্পর্কে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেল করোনা ভাইরাস তামার উপর চার ঘণ্টার বেশি, কার্ডবোর্ডের উপর ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত এবং প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলের উপর ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ তিন দিন পর্যন্ত টিকে থেকে সংক্রমণ চালাতে পারে। এর অর্থ ক্রেতা-বিক্রেতারা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকেও সহজেই নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারেন। তবে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে কাপড়ের তৈরী ব্যাগের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকেও এই তথ্যসমূহ সবসময় পুনারাবৃত্তি করা হচ্ছে শুরু থেকেই।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করে তারা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের চারপাশে ও নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই নিয়োজিত সাধারণ পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। আমাদের সমাজে বিভিন্নভাবে অনানুষ্ঠানিকভাবে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করেন কয়েক লাখ মানুষ, চলমান লকডাউন পরিস্থিতির কারণে তারা গভীর সঙ্কটের মুখে পড়েছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে নিয়োজিত প্রায় ১৫ লাখ পরিচ্ছন্নতা কর্মী জীবিকা হারাচ্ছেন এই মহামারীর সময়ে। আমাদের উৎপাদন করা বর্জ্য সংগ্রহ ও বাছাই করার কাজটা কোনো স্বীকৃতি ছাড়াই তারা সবসময় করে চলেছেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথোপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না পেয়েই। এমনকি এই সময়ও তাদের স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া অনেক পেশাজীবীদেরই যখন সরকারী প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, তখন বাড়িতে খাবার না থাকার বাস্তবতায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা উপকরণ ছাড়াই কাজে ফিরতেও বাধ্য হচ্ছেন এইসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।