মানবসদৃশ প্রজাতি
দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি সমাধি গুহা থেকে হোমো নালেডি নামের একটি প্রাচীন প্রজাতির দেহাবশেষ আবিষ্কার করেছেন গবেষকেরা। এটির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মানুষের আদি প্রজাতির মিল অনেক। বিজ্ঞানীরা গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, এ আবিষ্কারের ফলে মানুষের ক্রমবিকাশের গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির।
জোহানেসবার্গের কাছাকাছি ওই গুহায় জীবাশ্ম বা ফসিল হিসেবে যেসব হাড় মিলেছে, সেগুলো মোট ১৫টি প্রাণীর। ওই সমাধি গুহার গভীর থেকে গবেষকেরা প্রায় দেড় হাজার ফসিল উদ্ধার করেছেন। এগুলো কত দিন আগের, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন। গবেষক দলটির প্রধান এবং উইটওয়াটার্সর্যাান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্ন-নৃতত্ত্ববিদ লি বার্গার বলেন, তাঁরা মানবসদৃশ একটি নতুন প্রজাতির অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছেন। তারাও মৃতদের সমাধিস্থ করত। এত দিন পর্যন্ত ধারণা করা হতো, কেবল হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতির প্রাণীই (মানুষ) এ রীতি পালন করেছে।
উইটওয়াটার্সর্যাান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী ও তাঁদের সহযোগী স্বেচ্ছাসেবকেরা ‘ক্র্যাডল অব হিউম্যানকাইন্ড’ নামের বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র খুঁড়ে ২০১৩ সালে প্রথম হাড়গুলোর সন্ধান পান। ওই জায়গায় ১৯২০-এর দশকে খননকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে আদি মানুষের বেশ কিছু দেহাবশেষ পাওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিংগার বলেন, অন্তত ১৫টি প্রাণীর এতগুলো ফসিল একসঙ্গে আবিষ্কারের ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি মানুষের বংশলতিকার জটিলতা এবং এ ব্যাপারে অধিকতর গবেষণার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। একই রকম বৈশিষ্ট্যের প্রজাতিগুলোর মৌলিক উৎস এবং ক্রমবিকাশের সত্যিকারের ইতিহাস জানার জন্যই আরও গবেষণা দরকার।
বিজ্ঞানীরা বলেন, আদি প্রজাতির প্রাণীটির হাত, কবজি ও পায়ের পাতার হাড়গুলোর সঙ্গে আধুনিক মানুষের একই রকমের হাড়ের মিল রয়েছে। তবে প্রাণীটির মস্তিষ্কের আকৃতি এবং শরীরের ওপরের অংশ অনেকটা আদি মানুষের মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জন হকস বলেন, হোমো নালেডির মস্তিষ্ক ছিল ছোট—গড়পড়তা কমলালেবুর মতো। শরীরটা ছিল সরু। লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুট। ওজন প্রায় ৪৫ কেজি।
যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ট্র্যাসি কিভেল বলেন, হোমো নালেডির হাতগুলো বিভিন্ন হাতিয়ার ব্যবহার করার সামর্থ্যের ইঙ্গিত দেয়। আর এদের আঙুলগুলো ছিল আশ্চর্য রকমের বাঁকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার ডেপুটি প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ওই আবিষ্কারের ঘোষণা অনুষ্ঠানে গতকাল বলেন, ‘আজকের দিনটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। কারণ, বিশ্ববাসী আজ নতুন ও উল্লেখযোগ্য কিছু জানতে পেরেছে। আবিষ্কারটা হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে। এ জন্য আমরা আনন্দিত। ব্যক্তিভেদে আমাদের অবয়ব, ভাষা, বিশ্বাস ও সংস্কৃতিচর্চায় ব্যবধান থাকলেও একটি অভিন্ন প্রাচীন বংশধারায় আমরা পরস্পর যুক্ত।
উৎসঃ
মানবসদৃশপ্রজাতি। দৈনিক প্রথম আলো। ১১ সেপ্টেম্বর ,২০১৫। http://www.prothom-alo.com/technology/article/628408/ মানবসদৃশ-প্রজাতি